রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়ায় জুয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কোম্পানির কারখানার নিরাপত্তাকর্মী হাশিম উদ্দিন গত ৯ জানুয়ারি খুন হন। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজে বিশেষ কৌশলে মাফলারে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তিকে দেখতে পায় পুলিশ। তবে মুখ ঢাকা থাকলেও এই মাফলা বাঁধার স্টাইলই তাকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে!
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাশিম উদ্দিন খুন হওয়ার পর ওই এলাকার হাজারের বেশি ফুটেজ অনুসন্ধান করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫০ মিটার দূরে একটি সিসি ক্যামেরার অস্পষ্ট ফুটেজ পাওয়া যায়। ওই ফুটেজে গভীর রাতে চারজনকে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা যায়। পরবর্তীতে ওই চারজনের দুজন চলে যান বনানীর কড়াইল বস্তির দিকে, একজন ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে চলে যান বনশ্রীর দিকে। অপরজন বিশেষ কৌশলে মুখে মাফলার পেঁচিয়ে ঘটনাস্থল সংলগ্ন গলিতে ঢোকেন।
তার এই মাফলার ও মাফলার পেঁচানোর স্টাইল ঘটনাস্থলের আশপাশেসহ তেজগাঁও, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মহাখালী, নাখালপাড়া, খিলগাঁও এলাকায় পোস্টারিং করে দেখানো হয়। এরপরই নাখালপাড়ার এক বাসিন্দা জানান, এমন একজন লোককে ফেরি করে টুপি বিক্রি করতে দেখেছেন।
মগবাজারের একজন জানান, এ রকম মাফলার বেঁধেছে তেমন একজনকে ফেরি করে চুড়ি-ফিতা বিক্রি করতে দেখেছেন। উত্তর বাড্ডার এক ব্যক্তি পুলিশকে জানান, ঠিক একইরকম একজনকে ফেরি করে পাউডার বা কসমেটিকস বিক্রি করেন। তার নাম মো. হানিফ (৩৮)। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট এলাকায়। থাকেন তেজগাঁও এলাকায়। তিনি হানিফের ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বরও পুলিশকে দেন। তবে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় পুলিশ কুড়িপাড়া এলাকায় হানিফকে খুঁজতে থাকে।
পরবর্তীতে কুনিপাড়া এলাকায় ফুটেজের মতো মাফলার বাঁধার স্টাইল মেলে তেমন একজনকে পাওয়া যায়। তাকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, হানিফের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফেরি করে চুড়ি, টিপ, পাউডার, টুপি, চুল বাধার ফিতা বিক্রির পাশাপাশি তার মূল টার্গেট ছিল সিঁধ কেটে চুরির যোগ্য বাসা বা অফিস খুঁজে বের করা। গত ৮-১০ বছর ধরে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে শতাধিক চুরিতে জড়িত থাকলেও ধরা পড়েননি। তবে ২০১৩ সালে একবার মাদকসহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ধরা পড়ে মামলার আসামি হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, কারখানা শ্রমিকদের কাছে চুড়ি-ফিতা বিক্রির ছলে হানিফ জেনে নিয়েছিলেন কত তারিখে ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়। এরপরই ৯ জানুয়ারি সেখানে চুরি করতে গিয়েছিলেন হানিফ। তার ধারণা ছিল ১০ তারিখে যে বেতন দেয়া হবে, বেতনের সেই টাকা ৯ তারিখেই কারখানায় রাখা ছিল। তাই ওইদিন রাতে গ্রিল কেটে কারখানায় ঢুকেছিলেন হানিফ। তবে নিরাপত্তাকর্মী হাশিম উদ্দিন হানিফকে বাধা দিতে গেল রডের আঘাতে তাকে হত্যা করেন হানিফ।