দেশে প্রথমবারের মতো মৃত ব্যক্তির দান করা কিডনি আরেক ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিতে। এতে ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীর কিডনি নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোররাত পর্যন্ত দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে এই অস্ত্রোপচার করা হয়।
সারা ইসলাম নামের বিশ বছর বয়সী এক তরুণীর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার দুটি কিডনি ও চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের এই বিরল ঘটনাটি ঘটলো।
বিশ বছরের তরুণী সারা ইসলাম আক্রান্ত ছিলেন ব্রেইন টিউমারে। প্রায় ১৯ বছর ধরে মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম চালিয়ে আসছিলেন তার বাবা মা।
তবে শেষ রক্ষা হলোনা। মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সারা। কিন্তু মৃত্যুর আগে মানবতার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করে গেলেন সারা। দেহের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই তিনি মানুষের সেবায় দান করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে চিকিৎসকরা কেবল তার দুটি কিডনি ও চোখের কর্নিয়া নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সারার এমন দানে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ পেলো দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাই সদ্যপ্রয়াত মেয়ের শোক ভুলে সংবাদ সম্মেলনে এলেন এই বীর কন্যার জননী শবনম সুলতানা।
তিনি বলেন, সারা মৃত্যুর আগে তাঁর দেহের সবকিছুই দান করে দিতে বলেছেন। তবে তাঁর কিডনি ও কর্নিয়া নেওয়া হয়েছে। সারাকে বীরের মর্যাদা দেওয়া উচিত। মরণোত্তর কিডনি দানে উদ্বুদ্ধ করতে সারার এই দান মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
বুধবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মারা যান সারা। মৃত্যুর পরই তার দুটি কিডনি ও দুটি কর্নিয়া সরিয়ে নেয়া হয়। সাথে সাথেই এই চারটি অঙ্গ অন্য চারজনের দেহে প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত চলে দীর্ঘ অস্ত্রোপচার।
কিডনি প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন বিএসএমএমইউ-এর রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, সারা তিন দিন আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা দেওয়া হয়।
হাবিবুর রহমান জানান, সারার কিডনির সঙ্গে ম্যাচ করতে কয়েকজন কিডনি রোগীর তথ্য মেলানো হয়। এর মধ্যে ৩৪ ও ৩৭ বছর বয়সী দুই নারীর সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মিলে যায়। আত্মীয় না হওয়ায় এর বেশি মেলেনি। বাকিটা ওষুধ প্রয়োগে উপযোগী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে জীবিত দাতার কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। তবে ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি নেয়ার বিষয়ে আইনি সীমাবদ্ধতা ছিল। ২০১৮ সালে আত্মীয়দের সম্মতিতে ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে অঙ্গদান আইন সংশোধন করা হয়।